আজকেও পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতি ইন্দিরা আবাস, বেকার ভাতা, বিধবা ভাতা, বিপিএল কার্ড, ব্যাঙ্ক লোন থেকে শুরু করে সবুজায়ন – শিল্পায়ন – রাস্তাঘাট – কর্মসংস্থান অর্থাৎ ব্যক্তিগত এবং কিছুটা সমষ্টিগত উন্নতির চার দিকে আবর্তিত হচ্ছে৷ স্বাভাবিক অবস্থায় এটাই কাম্য৷ কিন্তু ভারতীয় রাজনীতিতে মুসলমানদের ক্রমবর্ধমান প্রভাব এবং এর পরিণাম সম্পর্কে উদাসীনতা দেখে মনে হচ্ছে আমরা বাড়িতে টাকা-পয়সা, সোনাদানা, দামী আসবাবপত্র সংগ্রহ করার নেশায় বাড়িতে নিরাপত্তার জন্য প্রয়োজনীয় শক্ত দরজা জানলা লাগানোর কথাটা বেমালুম ভুলে যাচ্ছি৷ আমরা ঘরপোড়া গরু, কিন্তু সিঁদুরে মেঘ দেখেও না দেখার ভান করছি৷ যেদিন ধর্মের ভিত্তিতে বঙ্গদেশ ভাগ হয়েছিল, সেদিন কি শুধু অধুনা পূর্ববঙ্গের বাঙালী হিন্দুর পরাজয় হয়েছিল? আমরা, পশ্চিমবঙ্গের বাঙালীরাও কি সেদিন সেই ধর্মীয় বিচ্ছিন্নতাবাদের সামনে আত্মসমর্পণ করি নি? ইদানীং পশ্চিমবঙ্গের ২৭% মুসলিমদের পক্ষ থেকে মুসলিম নেতারা ৪৮টি বিধানসভা সিটের ভাগ্যবিধাতা বলে নিজেদের ঘোষণা করে কি শুধুমাত্র পশ্চিমবঙ্গের রাজনৈতিক নেতাদেরকে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিচ্ছেন? নাকি এই চ্যালেঞ্জটা আপামর পশ্চিমবঙ্গবাসী বাঙালীর সামনে? আগামী পাঁচ বছর পরেও কি সংখ্যাটা ৪৮ই থাকবে? পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর নামের পাশে কোন হিন্দু পদবী আর কতদিন শোভা পাবে? এই সব প্রশ্নের শেষ কোথায়? শেষ প্রশ্নগুলি অবশ্যই এই রকম – পশ্চিমবঙ্গ কবে কাশ্মীরে পরিণত হবে? পশ্চিমবঙ্গ কবে হিন্দুবিহীন হবে? পশ্চিমবঙ্গ কবে বাংলাদেশ হয়ে যাবে?
মোদ্দা কথা অধিকাংশ বাঙ্গালী ভয়ে এই সব প্রশ্নগুলোকে এড়িয়ে যাচ্ছে৷ মানসিক ভাবে তারা হার মেনে নিয়েছে৷ না হলে বেড়া না দিয়ে সব্জী চাষ করার মত নির্বোধের কাজ অন্তত বাঙ্গালী বুদ্ধির সাথে ম্যাচ করে না৷ সাহস অবলম্বন করুন৷ আসুন আমাদের পরবর্তী প্রজন্মের নিরাপদ জীবনের কথা ভেবে কিছুদিনের জন্য ইন্দিরা আবাস আর চাকরীর কথা ভুলে যাই৷ আপনার আজকের নীরবতা আপনার সন্তানকে প্রতিদিন একটু একটু করে বিপদের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। আসুন, শপথ করি- পশ্চিমবঙ্গকে কাশ্মীর হতে দেব না৷ পশ্চিমবঙ্গ থেকে বাঙালীয়ানাকে হারিয়ে যেতে দেব না৷ জলকে জল না বলে পানি বলার মত পরিস্থিতি হতে দেব না৷ আমরা স্নান করবো, গোসল করতে বাধ্য হব না৷ আমরা যদি চেক লুঙ্গি পরি, সেটা পরবো নিজের ইচ্ছায়, বাধ্য হয়ে নয়৷
পশ্চিমবঙ্গের গ্রামে গ্রামে পৌষ মেলা হবে, চড়কপূজা হবে৷ মা কালী পাঁঠার মাথা খাবে, বুড়ো শিব ডুগডুগি বাজাবে৷ মা দুর্গাকে বিদায় দিতে গিয়ে দশমীর দিন আমার মায়েরা চোখের জল ফেলবে৷ লাল পাড়ের সাদা শাড়ি পরে আমার বোনেরা সরস্বতী পূজো করবে, কালো বোরখার অন্ধকারে তারা হারিয়ে যাবে না৷ বাঙ্গালীর মনে বীরভূমের বাউল, মালদার গম্ভীরা আর পুরুলিয়ার ছৌ-নৃত্যের স্থান আলকাফ আর জালসা কোনদিন নিতে পারবে না – চলুন, এই স্বপ্ন নিয়ে সব নেতাদের কাছে একবার আমরা যাই৷ চলুন জেনে আসি কে পশ্চিমবঙ্গকে পশ্চিমবঙ্গই রাখতে চায়৷ তারপরে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করি আমার পঞ্চায়েত থেকে শুরু করে বিধানসভা পর্যন্ত সমস্ত ক্ষমতা আমরা কাদের হাতে তুলে দেব৷ পশ্চিমবঙ্গের ভবিষ্যত হোক পশ্চিমবঙ্গই – পশ্চিম বাংলাদেশ নয়৷