রাঢ়বঙ্গের প্রসিদ্ধ কবি – “কবিচন্দ্র শঙ্কর চক্রবর্তী”। মধ্যযুগে বিষ্ণুপুরের মল্ল রাজাদের পৃষ্ঠপোষকতায় বিভিন্ন ধর্মগ্রন্থের ভাবানুবাদ পালাগানের রূপে রচনা করেছেন। এর মধ্যে বিষ্ণুপুরী রামায়ণ উল্লেখযোগ্য।
কবিচন্দ্রের দৌহিত্র বংশজাত শ্রী মাখনলাল মুখোপাধ্যায় কবিচন্দ্রের একটি গ্রন্থের সম্পাদনা করেন ১৩৪১ সালে। ভগবতামৃত শ্রী শ্রী গোবিন্দমঙ্গল নামের এই গ্রন্থের ভূমিকায় বিষ্ণুপুরী রামায়ণ কথাটা বাংলা সাহিত্যে প্রথমবার লিপিবদ্ধ হয়। এর আগে এই শব্দ লোকমুখে বহুল প্রচলিত ছিল।
তাঁর রচনায় ‘রামলীলা’, ‘রামমঙ্গল’ শব্দগুলি বহুল ব্যবহৃত। অধ্যাপক মণীন্দ্র মোহন বসুর কথায়, “কবিচন্দ্রের গ্রন্থ বিষ্ণুপুর অঞ্চলে গীত ও পঠিত হইত, এজন্য ইহা বিষ্ণুপুরী রামায়ণ নামেও প্রসিদ্ধ হইয়াছিল” (*)। এই প্রসঙ্গে ডঃ সুকুমার সেনের বক্তব্য, “কবিচন্দ্রের অধ্যাত্ম রামায়ণ নিবন্ধটি দক্ষিণ রাঢ়ে ‘বিষ্ণুপুরী রামায়ণ’ নামে একদা প্রসিদ্ধ হইয়াছিল”(**)। ডঃ অসিত কুমার বন্দ্যোপাধ্যায় বলছেন, “কবি যে নিষ্ঠা সহকারে কোনও বিশেষ সংস্কৃত কাব্যের অনুবাদ করেন নাই তাহা তিনি নিজেই স্বীকার করিয়াছেন। বাল্মীকি রামায়ণ, অধ্যাত্ম রামায়ণ, নিজস্ব কল্পনা প্রভৃতি মিশাইয়া কবি এই মিশ্র ধরণের রামকাব্য লিখিয়াছেন” (***)।
বঙ্গ এবং বাঙ্গালীর সাথে নাকি রামচন্দ্রের কোনও সম্পর্ক নেই। রাম নাকি বহিরাগত! – এই ধরণের ন্যারেটিভ বাজারে ছাড়া হয়েছে। তাই এই আলোচনা শুরু করলাম।
তথ্যসূত্র:
* বাঙ্গালা সাহিত্য: মণীন্দ্র মোহন বসু, দ্বিতীয় খন্ড ১৯৪৭, পৃষ্ঠা-১৪৭
** বাঙ্গালা সাহিত্যের ইতিহাস: সুকুমার সেন, দ্বিতীয় সংস্করণ ১৯৬৫, প্রথম খন্ড, পৃষ্ঠা- ৩৫৮
*** বাংলা সাহিত্যের ইতিবৃত্ত: অসিত কুমার বন্দ্যোপাধ্যায়, প্রথম সংস্করণ ১৯৬৬, পৃষ্ঠা- ১০৪৭
One thought on “বঙ্গ, বাঙ্গালী এবং রামায়ণ (১)”